আমরা সকলেই জানি বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে । ৪০+ বয়সের পর থেকেই ব্রেনের কার্যকারিতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে , কিন্তু কিছু টিপস অনুসরণ করলেও এই সমস্যা থেকে সহজেই উত্তরণ পাওয়া সম্ভব। আমরা আজ এই বিষয় নিয়েই বিস্তারিত কথা বলবো।
অনেক সময় লক্ষ্য করবেন যাদের বয়স একটু বেশি তারা খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু ভুলে যায় অনেক সময় অনেক জিনিস খেয়াল করতে পারে না। তার মানে এই নয় যে তার কোন বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে এই বয়সে এরকম সমস্যা খুবই স্বাভাবিক তবে এই ধরনের সমস্যা এড়াতেও বা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ধরে রাখার কিছু উপায় রয়েছে এগুলো যদি আমরা প্রতিনিয়ত ফলো করি তাহলে এই সমস্যা থেকে খুব তাড়াতাড়ি সমাধান পেতে পারি।
আপনাদের জন্য প্রথম যে কার্যকরী উপায়টি হলো সেটি হচ্ছে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
আপনার যদি ঘন ঘন রাগ হয় তাহলে আপনি শান্ত হয়ে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিন এমন পাঁচ মিনিট যাবত করতে থাকেন এতে মস্তিষ্ক খুবই ঠান্ডা হয়। যদি দেখেন কারো সাথে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে তাহলে জায়গা ত্যাগ করুন।
মস্তিষ্ক স্বাভাবিক রাখার দ্বিতীয় পরামর্শটি হল পর্যাপ্ত ঘুমানো
ঘুম আমাদের মানসিক শান্তি দেয়। আমাদের দৈনন্দিন মানসিক চাপগুলো এই ঘুম দূর করে আমাদের উচিত প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা গভীর ঘুম দেওয়া। যারা নিয়মিত ঘুমান না বা অন্তত ৫ ঘন্টারও কম ঘুমান তাদের নানা ধরনের রোগ রোগী শরীরে জন্ম নেয়।
মস্তিষ্ককে প্রতিনিয়ত একটিভ রাখুন
আপনার মস্তিষ্ককে সচল রাখার জন্য, আপনি বই পড়তে পারেন, বিশেষ করে আত্ম-উন্নয়ন বা গল্পের বই। আপনি বিভিন্ন স্কিল বা ভাষা শিখতে পারেন। আপনি ধাঁধা এবং মেমোরি গেমও খেলতে পারেন। আপনি লেখা, সংগীত, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি সৃজনশীল কার্যকলাপে নিজেকে নিযুক্ত করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন ধরণের কাজও করতে পারেন যা আপনার মস্তিষ্ককে সচল রাখবে।
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া
আপনি যদি নেচারের কাছাকাছি থাকতে পারেন তাহলে আপনার এই মস্তিষ্কের প্রেসনেসের জন্য খুব ভালো কাজ করে । কোথাও ঘুরতে যাওয়া শুধু আনন্দই নয় এটা মানসিক রোগের একটা চিকিৎসা । সবুজ গাছপালা নদীমালা খাল বিল পাহাড় সমুদ্র আবার আপনার মানসিক চাপ টেনশন থেকেও আপনাকে রিমিক্স দান করে ।
এছাড়াও একা বা প্রিয়জনের সঙ্গে ভ্রমণ করলে আপনার মধ্যে মানসিক ভারসাম্য ফিরে আসে । সপ্তাহে বা মাসে একবার হলেও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারেন । ফোন থেকে অবশ্যই অবশ্যই দূরত্ব বজায় রাখবেন । প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ছাদে বা বাহিরে কোথাও অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিটের মতো হলেও সময় কাটানো যায়।
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ
মস্তিষ্ক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই অবশ্যই পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক । আপনি যদি সবুজ শাকসবজি বাদাম সামুদ্রিক মাছ বা বেরি ফল খান তাহলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে । এসব খাবারের মধ্যে থাকে ওমেগা তিন ফাটি আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন বি এর মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে । তাই আমাদের অবশ্যই উচিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা
ধূমপান ও নিকোটিন জাতীয় পদার্থ পরিহার করা
মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখতে আমাদেরকে অবশ্যই ধূমপান নিকোটিন জাতীয় পদার্থ গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে । ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে একেবারে নষ্ট করে দেয় । আমরা যে প্রতিনিয়ত ভুলে যাই সেটার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান দায়ী হচ্ছে এই ধূমপান ধূমপান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলে ।
এর ফলে আমরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলি স্মৃতিশক্তি আমাদের প্রতিনিয়ত কমতে থাকে । এগুলো সেরোটোনিন ও ডোপামিন নামক গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের ভারসাম্য একেবারেই নষ্ট করে ফেলে যার ফলে আমাদের প্রতিনিয়ত রাগ উঠবে হতাশা এবং মস্তিষ্কের চাপ বাড়ে । তাই আমাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই এই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
আপনি কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় । কিন্তু তারপরও মানুষের নাম ভুলে যাওয়া , দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, কোথায় কোন জিনিসটি রাখলাম সেটি খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া এই সকল জিনিসটি খুবই সেনসিটিভ একটি বিষয় । আপনার যদি মনে হয় এই জিনিসটি স্বাভাবিকের থেকে খুব ভয়াবহ তবে আপনি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন ।
অবশেষে মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখা খুব কঠিন কোন কাজ নয় সামান্য সচেতনতা এবং উপরের দেওয়া উপায়গুলো যদি ফলো করতে পারেন তাহলে বয়স বাড়লেও আপনি এই ধরনের ঘনঘন ভুলে যাওয়া সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পারেন ।
লেখাটি অবশ্যই অবশ্যই সকলের মাঝে শেয়ার করবেন ,সচেতনতা বাড়াবেন । আপনার এই অবদানটুকু হতে পারে একজনের শারীরিক সুস্থতার কারণ ।
